খুদে হাতে তিন উদ্ভাবন

হঠাৎ বিপদে ঘড়িতে একটা বোতাম চেপেই পাওয়া যাবে সাহায্য, অনলাইনে প্রোগ্রামিং সংকেত পরীক্ষা করবে এক সফটওয়্যার, আর রোবট কাজ করবে আপনার চাহিদামতো—এই তিনটি উদ্ভাবন এসেছে তিন খুদে বিজ্ঞানীর হাত ধরে। রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে (ইউএপি) ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বিএএফ-এসপিএসবি শিশু-কিশোর বিজ্ঞান
কংগ্রেস ২০১৬’। সেখানে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক এ তিনটি প্রকল্প পুরস্কারও পেয়েছে।
আজমাঈন আকমাল, আজমল ফুয়াদ আলম ও সায়মা ইসলামের এই রোবটটি চলবে হাতের ইশারায়

হাতের ইশারায় চলবে রোবট
বগুড়া জিলা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির আজমাঈন আকমাল বানিয়েছে মানুষের দৈনন্দিন কাজ করে দেয় এমন একটি রোবট। যা কিনা আবার কাজ করে হাতের ইশারায়। নিজের রোবট সম্পর্কে আজমাঈন আকমাল বলেন, ‘আমরা একটি স্মার্ট রোবট বানাতে চেয়েছি। যা মানুষের সাহায্যকারী হিসেবে নানা কাজ করে দেবে।’ তাঁর কাছ থেকেই জানা গেল, যেখানে মানুষের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে, এমন জায়গায় এই রোবট কাজ করবে। যেমন দুর্গম জায়গা থেকে কোনো কিছু উদ্ধার করতে ব্যবহার করা যাবে রোবটটি।
রোবট বানাতে আজমাঈনের দলে আজমল ফুয়াদ আলম ও সায়মা ইসলাম নামে আরও দুজন কাজ করেছেন। তিনজনের দলটি ইন্টারনেটে তথ্য ঘেঁটে এবং রোবোটিকস বিষয়ে নানা ভিডিও দেখে রোবট বানানোর কাজ শিখেছেন। এই খুদে দলটির এখন স্বপ্ন তাদের রোবটটি বড় মাপে বানানো।
আজমাঈন আকমাল যেমনটি বলেন, ‘এই রোবটটি নিয়ে আমরা আরও কাজ করে ভুলত্রুটি দূর করার মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করার কাজে লাগাতে চাই।’ দলটির বানানো রোবটটি প্রতিযোগিতায় জুনিয়র বিভাগে পুরস্কার জিতেছে।

নিরাপত্তায় সঙ্গী সেফটি মেট
পথের আচমকা বিপদ তো বলে কয়ে আসে না। যেমন কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনার কথাই চিন্তা করুন। নির্জন রাস্তায় চলতে গিয়ে পড়েছেন ছিনতাইকারীর কবলে। তখন জীবনের বাঁচাতে সর্বস্বান্ত হাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে? ঠিক এমন ভীতিকর পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির রিয়াজুল জান্নাত ও সাদিয়া সুলতানা বানিয়েছেন ‘সেফটি মেট’। এটি আদতে হাতঘড়ি। যা আপনাকে এমন বিপদের সময় কিছুটা হলেও সহায়তা করবে। কীভাবে কাজ করবে এই হাতঘড়ি?
মুঠোফোনে কথা হয় রিয়াজুল জান্নাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এমন বিশেষ পরিস্থিতিতে ঘড়ির একটি বিশেষ বোতামে চাপ দিলেই ঘড়িটি আক্রমণকারীর দিকে রাসায়নিক স্প্রে করবে। তাকে ভড়কে দিতে এই স্প্রে কাজ করবে। এ ছাড়া ঘড়িতে থাকবে ক্যামেরা। যা তাৎক্ষণিক ছবি কাছের থানায় পাঠাবে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে। জিপিএস প্রযুক্তিও থাকবে ঘড়িতে। ফলে আক্রমণের জায়গার ভৌগোলিক তথ্যও জানিয়ে দেবে নিকটস্থ থানায়।’ এভাবেই সহায়তার হাত বাড়াবে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জান্নাত বলেন, ‘ইভ টিজিংয়ের ঘটনা থেকে এই যন্ত্রের কথা মাথায় আসে।’ মেয়েদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই জান্নাত প্রথমে এই যন্ত্রের কথা। চিন্তা করেছিল তারপর এটি সবার ব্যবহারের উপোযোগী করে নকশা চূড়ান্ত করে। শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসে জান্নাতের এই নকশা সিনিয়র বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে।

লাইট আর্কিটেকচার অনলাইন জাজ
বরগুনার আমতলীর এ কে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আতিয়াব জোবায়ের। ছোট ক্লাসে পড়লেও প্রোগ্রামিংয়ে সে ঝানু! এই খুদে প্রোগ্রামের প্রকল্প ‘লাইট আর্কিটেকচার অনলাইন জাজ’। এটি মূলত একধরনের অনলাইন সফটওয়্যার, যা প্রোগ্রামিংয়ের বিভিন্ন কোড পরীক্ষা করে থাকে। নিজের প্রকল্প সম্পর্কে আতিয়াব জোবায়ের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এটি অনলাইন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার একটি কনটেস্ট হোস্টিং প্ল্যাটফর্ম। এটাকে পূর্ণাঙ্গ প্রোগ্রামিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তৈরি করতে চাই।
আতিয়াব বলেন, ‘লাইট আর্কিটেকচার অনলাইন জাজ’ নামে এই প্রকল্পটি একটি ওয়েবঅ্যাপ, যা সাধারণ ওয়ার্ডপ্রেস বা জুমলার মতো ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে ইনস্টল করে যেকোনো লিনাক্স সার্ভারে চালানো যায়। সেই সঙ্গে প্রোগ্রামিং কোড পরীক্ষার কাজটিও অনেক বেশি সহজে সম্পন্ন হয়। জোবায়েরের প্রকল্পের পরীক্ষাপদ্ধতি সহজ বলেই তার নাম দিয়েছেন ‘লাইট আর্কিটেকচার অনলাইন জাজ’।
শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসে দিনশেষে আতিয়া জোবায়েরের প্রকল্পটি নির্বাচিত হয়েছে ‘প্রজেক্ট অব দ্য কংগ্রেস’ হিসেবে।


কোন মন্তব্য নেই

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷

Blogger দ্বারা পরিচালিত.