পৃথিবীর অর্থনীতির পতন ঘটাতে পারে এমন ধাতব গ্রহাণু অনুসন্ধানে নাসা



সাইকি-১৬ গ্রহাণু আমাদের সৌর জগতের অন্যতম একটি বিস্ময়কর বস্তু যা পৃথিবী থেকে প্রায় ২৩ কোটি মাইল দূরে অবস্থান করছে। কিন্তু দূরবর্তী এই গ্রহাণুটিই আমাদের জন্য সৌভাগ্যের কারণ হতে পারে।
সম্প্রতি মহাকাশ সংস্থা নাসা এই গ্রহাণুর উদ্দেশ্যে একটি অভিযান পরিচালনার ঘোষণা করেছেন। পূর্বের পরিকল্পনার চেয়ে এক বছর আগেই এই অভিযান শুরু হবে। মূলত ২০২৩ সালে হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা ২০২২ সালে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যা ২০২৬ সালে গ্রহাণুর কাছে পৌছুবে।
গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীর একটি মানব চরিত্র সাইকির নামানুসারে এর নামকরন করা হয়, যে কিনা অমরত্ব লাভ করেছিলো। সাইকি ১৬ গ্রহাণু অঞ্চলে আবিষ্কৃত এযাবতকালের সবচেয়ে বড় গ্রহাণু যা প্রচুর ধুলোচ্ছান্ন অবস্থায় রয়েছে। এটি বৃহস্পতি এবং মঙ্গল গ্রহের মাঝামাঝি বৃহত্তম গ্রহাণু অঞ্চলে অবস্থিত এবং সৌর জগৎ সৃষ্টির সময় আংশিকভাবে ধ্বংস হওয়ার আগে হয়তো একটি গ্রহ অবস্থাতেই ছিলো।
১৩০ মাইল প্রশস্ত এই ধাতব টুকরোটি লোহা, নিকেল এবং আরও কয়েকটি বিরল ধাতু দিয়ে তৈরী। যার মাঝে সোনা, প্লাটিনাম এবং তামা অন্যতম। যদি গ্রহাণুটিকে পৃথিবীতে ফেরত আনা হয় তবে শুধুমাত্র এর লোহার মূল্যই হবে প্রায় দশ হজার কোয়াড্রিলিয়ন ডলার। আর সেইসাথে সাইকি-১৬ পৃথিবীবাসীকে শীলা বা বরফের পরিবর্তে লোহার তৈরী কোন বিশ্ব আবিষ্কারের সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।
অপরদিকে গ্রহাণুটির এই মূল্য পৃথিবীর পণ্যমূল্য কমাতে এবং বিশ্বের অর্থনীতিতে ৭৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
পৃথিবীতে গ্রহাণু পদার্থের বাজার অনুমান করলে দেখা যায়, এটি অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর মূল্য হ্রাস করতে পারে এবং এর ফলে সরকারী সম্পদসহ অন্যান্য সম্পত্তির মূল্য সম্পূর্ণরূপে অবমূল্যায়ীত হবে। সাথে সাথে যে সকল কোম্পানী এসব উত্তোলন, বাজারজাতকরণ এবং এর বাণিজ্যের সাথে যুক্ত তারাও ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আর সামগ্রিকভাবেই এটি অর্থনীতিকে পতনের দিকে ধাবিত করবে।
অভিযান পরিচালনাকারী দলটি দেখবেন সাইকি কি কোন পূর্ববর্তী গ্রহের কেন্দ্র ছিলো কিনা, এর বয়সই বা কত কিংবা এটা কি পৃথিবীর কেন্দ্রের মতোই গঠিত হয়েছে কিনা অথবা এর পৃষ্ঠতল দেখতে কেমন।
নাসা সদর দপ্তরের পরিচালক জিম গ্রিন বলেন, “আমরা গ্রহাণু সাইকির আবর্ত পথকে আরও কার্যকর করার জন্য এই অভিযান এগিয়ে নেয়ার নকশাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আর এটাই আমাদের বিজ্ঞানের উদ্দেশ্যকে দ্রুত পূরণ এবং ব্যায় কমাতে সক্ষম করে তুলবে।”
মহাকাশযানটির যন্ত্রপাতির মধ্যে একটি ম্যাগনেটোমিটারের সাথে মাল্টিস্পেকট্রাল ইমেজার এবং একটি গামা রশ্মি ও নিউটন স্পেকট্রমিটার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
নাসার প্রধান অভিযান বিজ্ঞানী এবং এরিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক লিন্ডি এলকিন্স বলেন, “এজাতিয় সৌর জগতের একমাত্র পরিচিত গ্রহাণু হচ্ছে সাইকি-১৬ আর শুধুমাত্র এই পদ্ধতির অভিযানের মাধ্যমেই মানুষ একটি কোর বা কেন্দ্র পরিদর্শন করতে পারবে। আমরা বহিঃমহাকাশ পরিদর্শন করে ভেতরের আমরা পৃথবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে গিয়ে পৃথবী ভেতরের অনেক তথ্যই জানতে পারি।”
গ্লোবাল নিউজ কানাডাকে ড. এলকিন্স-ট্যান্টন বলেন, “যদি আমরা একটি বিশাল ধাতুর টুকরো ধরতে পারি এবং সেটা পৃথিবীতে নিয়ে আসি, তবে আপনি কি করবেন?”
“আপনি কি এর উপর বসে পড়বেন এবং একে গোপন করে বিশ্বের অন্য সকল সম্পদ যেমন হীরার মতো মূল্যবান ধাতুকে নিয়ন্ত্রণ করে আপনার ব্যাবসার বাজার রক্ষা করবেন? এমনকি আপনি যদি একে পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে মানুষের সকল ধাতব সম্পদের সমস্যা সমাধান করতে চান তবে এটা অবশ্যই একটি বন্য আসক্তি হয়ে যাবে।”
গ্রহাণুটিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার কোন পরিকল্পনা নাসার নেই কিন্তু এর পরিবর্তে মহাকাশ সংস্থাটি আবিষ্কার করতে চেষ্টা করবে কীভাবে একটি গ্রহ এর স্তর থেকে বিভক্ত হয়েছে। [ডেইলি মেইল- অবলম্বনে]

২টি মন্তব্য:

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷

Blogger দ্বারা পরিচালিত.